Home সমকালীন তথ্য ঘসেটি বেগমের ষড়যন্ত্র ও শেষ পরিণতি

Thumb

ঘসেটি বেগমের ষড়যন্ত্র ও শেষ পরিণতি

পলাশীর যুদ্ধের কথা বাংলাদেশের সব বাঙালিরাই ভালো করেই জানে। আজকের আর্টিকেলে এমন এক ব্যক্তি সম্পর্কে আলোচনা করা হবে। যে ছিল, খুবই ঘৃণিত একজন ব্যক্তি। ঘসেটি বেগম সম্পর্কে সবার কৌতুহল থাকে নিচে ঘসেটি বেগমের জীবন সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।

পলাশীর যুদ্ধের কথা সব বাঙালির হৃদয়ে এখনো গেঁথে রয়েছে, নবাব সিরাজউদ্দৌলা কে যেভাবে নৃশংসভাবে ফাঁসানো হয়েছে সেটা খুবই ভয়াবহ। ১৭৫৭ সালে গঠিত পলাশীর যুদ্ধে ঘষেটি বেগম, মীরজাফর সহ, আরো অনেকেই ষড়যন্ত্র করে, নবাব সিরাজউদ্দৌলা কে পলাশীর যুদ্ধে তাকে পরাজিত করেন।

ঘসেটি বেগম

ঘসেটি বেগম হল নবাব আলীবর্দী খানের বড় মেয়ে। আলীবর্দী খান ছিলেন বাংলার নবাব। তিনি বাংলা বিহার এবং উড়িষ্যার নবাব ছিলেন এবং তিনি একজন ন্যায় বিচারকও ছিলেন।

তার মৃত্যুর পর তার নাতি নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে  বাংলার সিংহাসনে আরোহন করেন। মূলত ঘসেটি বেগম ছিলেন নবাব সিরাজউদ্দৌলার খালা। তার নাম ছিল নবাবজাদী মেহেরুন নিসা বেগম, তবে তিনি ঘষেটি বেগম নামেই অধিক পরিচিতি লাভ করেন। পারিবারিক ক্ষেত্রে ঘসেটি বেগম ছিলেন অনেক চতুর এবং চালাক। তিনি বাংলার ইতিহাসে সবচেয়ে জঘন্য একজন ব্যক্তি। তিনি অনেক বিলাসবহুল জীবন যাপন করতেন।

নবাবজাদী মেহেরুন্নেসা বেগম ওরফে ঘসেটি বেগম ছিলেন বাংলার নবাবের জেষ্ঠ কন্যা। তাকে তার স্বামীর নাম নওয়াজিস মোহাম্মদ খান উপনাম শাহমত জং। মোহাম্মদ নওয়াজিস  খান যিনি ঢাকার নায়েব নাজিম নিযুক্ত হন। ঘসেটি বেগম এবং  শাহমাত জং এদের কোন সন্তান ছিল না। তারা নিঃসন্তান দম্পতি ছিলেন। সন্তান  না হওয়ার কারণে  সিরাজউদ্দৌলার ছোট ভাইকে পালক পুত্র হিসেবে নেন। তার পালক পুত্রের নাম হল একরামউদ্দৌলা। ঘসেটি বেগমের ইচ্ছে ছিল তার পালকপুত্র একরামউদ্দৌলাকে বাংলার নবাব করা কিন্তু তার ইচ্ছা সফল হয়নি। তার পালকপুত্র নবাব একরামউদ্দোল্লা কিশোর বয়সে গুটি বসন্তে মারা যায়।

ষড়যন্ত্র

১৭৫৭ ঘটে যাওয়া পলাশীর যুদ্ধে নবাব সিরাজউদ্দৌলা পরাজিত হন মূলত তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছিলেন। সেজন্য পলাশীর যুদ্ধে তাকে হার মানতে হয়েছিল। এবং তিনি নৃশংসভাবে শহীদ হয়েছিলেন। যখন বাংলার নবাব সিরাজউদ্দৌলা বাংলার নবাব হন, তখন তার খালা অর্থাৎ  ঘসেটি বেগম কিছুতেই মানতে রাজি হননি। ঘসেটি বেগমের ইচ্ছা ছিল তার বোনের ছেলে অর্থাৎ শাহ বেগমের পুত্র শওকত জংকে  বাংলার সিংহাসনে বসানোর। কিন্তু যখন তিনি দেখলেন, নবাব সিরাজউদ্দৌলা  সিংহাসনে বসলেন তখন তিনি তা মানতে না পেরে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন এবং বাংলার সেনাপতি মীরজাফরের সাথে গোপনে ষড়যন্ত্র করতে থাকেন। বাংলার নবাব সিরাজউদ্দৌলার বিরুদ্ধে নানাভাবে ষড়যন্ত্র চালাতে শুরু করেন। মূলত ঘসেটি বেগমের সাথে মীরজাফর, ব্যবসায়ী জগত শেঠ, উমি চাঁদসহ অনেকেই লিপ্ত ছিলেন। ঘসিটি বেগমের অনেক টাকা পয়সা এবং প্রাচুর্য ছিল। তার পিতার উপর তিনি তার মতামতকে চাপাতে না পারলেও তার স্বামীকে তিনি তার কথামতোই তার ইচ্ছা বাস্তবায়ন করতে পারেন। তা স্বামীর বিপুল অর্থ প্রাচুর্য তার হয়ে যায়। এমনকি তিনি রাজনীতিতেও অনেক দক্ষ ছিলেন। তিন বোনের মধ্যে তিনি বেশি বিলাসবহুল জীবন যাপন করতেন। এমনকি ঢাকার মতিঝিলে তার একটি নিজস্ব প্রাসাদ ছিল। মীরজাফরকে তিনি অর্থ লোভ দেখিয়ে তার সাথে ষড়যন্ত্র করেছেন। মীরজাফর খুব অল্প দিনে অনেক অর্থের মালিক হয়েছেন।

শেষ পরিণতি

মূলত ঘসেটি বেগম ছিলেন বাংলার সব থেকে জঘন্যতম একজন নারী। তার শেষ পরিণতি ছিল অত্যন্ত ভয়াবহ। শেষ অবস্থাই তিনি তা নিজের ভুল বুঝতে পেরেছিলেন। ১৭৫৭ সালের সংঘটিত পলাশীর যুদ্ধে নবাব সিরাজউদ্দৌলা কে ষড়যন্ত্র করে পরাজিত হওয়ার পর ইংরেজরা মীরজাফরকে বাংলার নবাব হিসেবে ভূষিত করেন। তারপর ঘষেটি  বেগমের যাদের সাথে ষড়যন্ত্র করেছিলেন এক সময় তারাই তার বিরুদ্ধে  ষড়যন্ত্র করতে থাকেন। মীরজাফরের পুত্র  মীরন তাকে এবং সিরাজউদ্দৌলার মা আমেনাকে সহ  ঢাকার মতিঝিলে  একটি জিনজিরা  প্রাসাদের গৃহবন্দী করে রাখেন। মীরজাফরের পুত্র মীরন তাকে  গৃহবন্দী ঘসেটি বেগমকে তারপরও বিশ্বাস করতে পারছিলেন না, তাকে ভয়ংকর অপরাধী বলে চিহ্নিত করেছিলেন। তাই ঘসেটি বেগম এবং আমেনাকে সহ মুর্শিদাবাদে প্রেরণ করতে বলেন। কথিত রয়েছে বুড়িগঙ্গা নদীর ডুবে তাদের মারা গিয়েছিল। ঘসেটি  মৃত্যু নদীর ওইপাশ পর্যন্ত লোকজনে শুনতে পেরেছিলেন। ঘসেটি বেগম বাংলার ইতিহাসে এমন এক  অভিশাপের নাম। যতদিন বাংলার ইতিহাস রয়েছে ততদিন বাঙালির মনে ঘসেটি নামক খলনায়ক নামটি খুব ঘৃণার সাথে সবাই মনে করবে। মূলত ঘসেটি বেগম ১৭৬০ সালে মৃত্যুবরণ করেন।