Home সমকালীন তথ্য মাতা পিতার প্রতি সন্তানের কর্তব্য - পিতার-মাতার প্রতি সন্তানের যেসব দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে

Thumb

মাতা পিতার প্রতি সন্তানের কর্তব্য - পিতার-মাতার প্রতি সন্তানের যেসব দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে

মাতা পিতার প্রতি সন্তানের বিভিন্ন দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। সন্তানকে বড় করা মানুষ করা যেমন মা বাবার দায়িত্ব, তেমনি মা-বাবার প্রতিও সন্তানের বিভিন্ন দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমি শারমিন আক্তার সুইটি আপনাদেরকে জানাবো মা-বাবার প্রতি সন্তানের কি কি দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে।

মা-বাবার প্রতি সন্তানের প্রদান দায়িত্ব ও কর্তব্য

মা বাবা এমন একটা জিনিস যা সবাই চাইলেই পায় না। এ পৃথিবীর অনেকেই আছে যাদের কোন মা-বাবা নেই। তারা কত কষ্টে তাদের জীবন যাপন করছে শুধু তারাই জানে। তাই আমাদের বেঁচে থাকতে মা-বাবার গুরুত্ব দিতে হবে। আবার মা বাবার প্রতি আমাদের যেসব দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে সন্তান হিসেবে আমাদের সেগুলো পালন করা উচিত। দায়িত্ব কে অবহেলা করা উচিত নয়। মা বাবার প্রতি একজন সন্তানের সেসব দায়িত্ব-কর্তব্য রয়েছে তার নিচে বর্ণনা করা হলো।

মা বাবা সেবা করাঃ মা-বাবার প্রতি সন্তানের প্রধান দায়িত্ব হলো সেবা করা। শুধু যে মা বাবা অসুস্থ হলেই তার দায়িত্ব পালন করবে এমনটা না। শুধু অসুস্থ অবস্থায় মায়ের সেবা করবে এমনটা না। সুস্থ অবস্থায় মা বাবার সেবা যত্ন করতে হবে। অসুস্থ অবস্থায় মায়ের যত্ন নিতে হবে। বাবার শরীর খারাপ হলে তারও দেখাশোনা করতে হবে। মা বাবার জ্বর আসলে জ্বর যাতে তাড়াতাড়ি ভালো হয়ে যায় তার জন্য ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে।  শুধু সেবা করাই মা-বাবার দায়িত্ব নয় আরো কিছু দায়িত্ব আছে মা-বাবার প্রতি। মা অথবা বাবা যদি কোন বড় ধরনের রোগে আক্রান্ত হয় তাহলে যত টাকাই লাগুক, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মা বাবাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া উচিত।

অনেক সন্তান আছে যারা টাকার অভাবে মা-বাবাকে চিকিৎসা দিতে পারে না। সেই ব্যাপারটা আলাদা। কিন্তু অনেকে আছে যাদের টাকা থাকা সত্ত্বেও মা-বাবার চিকিৎসা করায় না। টাকার চিন্তা না করে আমাদের মা-বাবার চিন্তা করা উচিত।  টাকার গুরুত্ব না দিয়ে মা বাবা যেনো সুস্থ থাকে সেই দিকে খেয়াল রাখতে হবে। সন্তান যখন অসুস্থ থাকে তখন মা-বাবা সবটা দিয়ে তাকে সুস্থ করে তোলার চেষ্টা করেন। তাহলে সন্তানের কি উচিত নয় মা বাবার অসুস্থতার সময়ে তাদের পাশে থাকা, তাদের খেয়াল রাখা, তাদের যত্ন নেওয়া, ওষুধ খাওয়ানো ইত্যাদি। মা বাবা এমন একটা জিনিস যা সবাই চাইলেই পায় না। তাই একজন আদর্শ সন্তান হিসেবে মা-বাবার যত্ন নেওয়া, খেয়াল রাখা, ওষুধ খাওয়ানো এগুলো সন্তানের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। তাই আমাদের উচিত মা-বাবার খেয়াল রাখা, মা বাবার সেবা করা, এটি একটি সন্তানের প্রধান কর্তব্য ও দায়িত্ব। তাই আমাদের উচিত মা বাবার সেবা করা।

মা-বাবাকে সম্মান করাঃ একজন সন্তানের মা-বাবার প্রতি আরেকটি দায়িত্ব ও কর্তব্য রইলো মা-বাবাকে সম্মান করা। মা বাবা আল্লাহর দেওয়া শ্রেষ্ঠ সম্পদ। তাদেরকে সব সময় সম্মানের জায়গায় রাখতে হবে। তাদের সাথে উচ্চস্বরে কথা বলা যাবে না। মা বাবা যেন কোনো কারণে কষ্ট না পায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। মা-বাবা যেন কোন কিছুর অভাব না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। অনেক সন্তান আছে যারা মা বাবার সাথে খুব খারাপ ব্যবহার করে, মা-বাবাকে তাদের যথাযোগ্য সম্মানটা দেয় না, তারা সন্তান নয় সন্তান নামের কলঙ্ক। একজন আদর্শ সন্তান কখনোই তার বাবা-মাকে অসম্মান করে না। সব সময় তার বাবা-মাকে সম্মান করে। পিতা মাতার প্রতি সন্তানের কর্তব্যের কোন শেষ নেই। কিন্তু সব কর্তব্য সম্মানের সাথে পালন করতে হবে।  মা বাবার গায়ে হাত তোলা যাবে না এতে মা-বাবার অসম্মান হবে। মা-বাবার অসম্মান হয় এমন কোন কাজ সন্তান হিসেবে করা যাবেনা। মা-বাবাকে কখনো অশ্রদ্ধা করা যাবে না। সব সময় তাদের শ্রদ্ধার জায়গায় রাখতে হবে। কারণ একটা সময় আসবে যখন আমরা চাইলেও আমাদের মা-বাবাকে আর ফিরে পাবো না। তাই আমাদের মা-বাবা যতদিন বেঁচে রয়েছে, ততদিন তাদের প্রতি এই দায়িত্ব-কর্তব্য আমাদের পালন করে যাওয়া উচিত।

আনুগত্য করাঃ মা-বাবার আমাদের গুরুজন। তাদের প্রতি আনুগত্য স্বীকার করা উচিত। পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের অন্যতম দায়িত্ব ও কর্তব্য হলো তাদের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করা। কোন ভাবেই তাদের অবদানকে অস্বীকার করা যাবে না। আমাদের জন্মের পর থেকে এখন পর্যন্ত বাবা আমাদের জন্য যা যা করেছেন তা এ পৃথিবীর কেউই করবেনা। তাই বাবা-মার প্রতি আমাদের ঋণের কোন শেষ নেই। তাদের এই অবদানের জন্যই তাদের প্রতি আমাদের আনুগত্য থাকা উচিত। পিতা-মাতার প্রতি আনুগত্য স্বীকার করা এটিও এক ধরনের মৌলিক ইবাদত। শুধু আল্লাহর ইবাদত করলেই তা ইবাদত হিসেবে গণ্য হবে না। সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ ইবাদত হলো মা-বাবার প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য যথাযোগ্য ভাবে পালন করা। যারা পিতামাতার প্রতি এই দায়িত্ব কর্তব্য কে অবহেলা করবে তারা আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি লাভ করতে পারবে না। যারা পিতা-মাতার অবদানকে অস্বীকার করবে তাদের প্রতি আনুগত্য স্বীকার করবে না, তারা কখনোই আল্লাহতালার মন জয় করতে পারবে না। তাদের কোন ইবাদতই গণ্য হবে না। তাই আমাদের সবসময়ই পিতা-মাতার অবদানের প্রতি আনুগত্য স্বীকার করা উচিত।

সদাচরণ করাঃ পিতা-মাতার প্রতি সদাচরণ, পিতা-মাতার প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। তাই আমাদের সবসময়ই পিতা-মাতার সাথে ভালো ব্যবহার করা উচিত। তাদের সাথে কখনো খারাপ আচরণ করা উচিত নয়। তাদের গায়ে হাত তোলা তো দূরের কথা উচ্চস্বরে কথা বলা উচিত নয়। ইসলাম ধর্মে বলা আছে মায়ের পদতলে সন্তানের বেহেস্ত। এছাড়াও বাবাকে ইসলামের শ্রেষ্ঠ সম্মান দিয়েছেন। যেসব সন্তান পিতা মাতার সাথে খারাপ আচরণ করে, ভালো ব্যবহার করে না তাদের পরিণাম জাহান্নাম। যারা সবসময় পিতা-মাতার সাথে ভালো আচরণ করবে, আল্লাহ তা'আলা তাদের সাথে কখনো খারাপ কিছু হতে দেবেন না। পিতা মাতার সাথে ভালো আচরণ করা ফরজ ইবাদতের মধ্যে পড়ে। এর থেকে ভালো ইবাদত আর নেই। তাই আমাদের সবসময়ই পিতা মাতার সাথে সদাচরণ করা উচিত। এটি একটি শ্রেষ্ঠ দায়িত্ব ও কর্তব্য।

কৃতজ্ঞতা প্রকাশঃ  পিতা-মাতার প্রতি আরো একটি দায়িত্ব ও কর্তব্য হলো কৃতজ্ঞতা প্রকাশ। মা-বাবা আমাদের জন্য যা করেন তা এ পৃথিবীর কেউ আমাদের জন্য কখনোই করবে না। আমাদের জন্মের পর থেকে মা আমাদের কোলে পিঠে করে মানুষ করেন। বাবা আমাদের সব ইচ্ছা পূরণ করেন। সন্তান অসুস্থ হলে মা-বাবা তার সবটা দিয়ে সুস্থ করে তোলার চেষ্টা করেন। তাই তাদের অবদানের কথা বলে শেষ করা যাবে না। আর তাদের এসব অবদানের ফলে আজ আমরা এই পৃথিবীতে এখনো বেঁচে আছি। তাই আমাদের মা-বাবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা উচিত। শুধু কাজের মাধ্যমে নই তাদের সাথে কথা বলার মাধ্যমেও বোঝাতে হবে যে, সন্তান হিসেবে আমরা বাবা-মার প্রতি কৃতজ্ঞ। শুধু কাজের মাধ্যমে প্রকাশ পায় না কথার মাধ্যমেও প্রকাশ পায় কৃতজ্ঞতা। তাদের মন জয় করতে হবে। পিতা মাতার প্রতি সন্তানের আরো অনেক কর্তব্য রয়েছে।

বার্ধক্যে সেবা করাঃ শেষ বয়সেও বাবা-মার সেবা করতে হবে। যখন বাবা মা হাঁটতে চলতে পারবে না, অসুস্থ হয়ে পড়বে, তখন সন্তানের দায়িত্ব ও কর্তব্য তাদের সেবা যত্ন করা। অনেক বাবা মা আছেন যারা বিছানা থেকে উঠতে পারে না, তাদের বিশেষ যত্ন করতে হবে। তাদের সেবা করতে হবে। তাদের তিরস্কার করা যাবে না। ধমক দেয়া যাবে না। তাদের সাথে বন্ধুসুলভ আচরণ করতে হবে। কারণ মানুষের বয়স যখন বেশি হয় তখন তাদের মন বাচ্চাদের মত হয়ে যায়। তাইতো কথাবার্তার মাধ্যমে বোঝাতে হবে যে সন্তান হিসেবে আমরা বাবা-মার বন্ধু। বাবা মায়ের সেবা না করলে সন্তান কোনদিনই জান্নাতে যেতে পারবে না। তাই বাবা-মা সেবা করা অত্যন্ত জরুরী।

ব্যয় নির্বাহ করাঃ পিতা-মাতা অক্ষম হলে তাদের ব্যয় নির্বাহ করতে হবে। কারণ তারা নিজেদের ভরণপোষণ নিজেরা করতে পারবেনা। তখন সন্তানের কর্তব্য হলো পিতা-মাতার  ভরণ পোষণের ব্যবস্থা করা। পিতা মাতার প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করলে আমরা আখিরাতে অনেক ফল পাব। তাই আমাদের পিতা-মাতার ব্যয় বহন করা উচিত। যাতে পিতা-মাতার কোন কিছুর অভাব না হয়। তাদের খাওয়া দাওয়া, পোশাক ও আরো অন্যান্য যা যা প্রয়োজন সবই ব্যবস্থা করে দিতে হবে। সন্তান এটা সন্তানের দায়িত্ব ও কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। কারন আমরা যখন ছোট ছিলাম তখন আমাদের বাবা-মা আমাদের ব্যয় নির্বাহ করতেন। আর যখন আমাদের বাবা-মা অক্ষম তখন সন্তান হিসেবে আমাদের উচিত বাবা-মায়ের যাবতীয় খরচ বহন করা।

আহব্বানে সাড়া দেওয়াঃ একজন সন্তান হিসেবে দায়িত্ব ও কর্তব্যের মধ্যে আরেকটি বিষয় হলো পিতা-মাতার আহ্বানে সারা দেওয়া। পিতা-মাতা যখনই ডাকবেন সন্তানের শোনা উচিত। কথাবার্তায় পিতা-মাতার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়ে চলতে হবে। সন্তানের কোন সমস্যা হলে ভালবাসার সাথে পিতা-মাতাকে বুঝাতে হবে। কিন্তু পিতা-মাতার কথার অবাধ্য হওয়া চলবে না। তাদের কথার বাইরে যাওয়া যাবে না। এমনকি পিতা-মাতা ডাকলে নফল নামাজে দেরি করলেও সমস্যা নেই। পিতা মাতার ডাকে সাড়া না দিলে তারা মন থেকে কষ্ট পায়। তাই বাবা মাকে কখনো কষ্ট দেওয়া উচিত নয়। সব সময় তাদের কথা শোনা উচিত।

আদব রক্ষা করাঃ পৃথিবীতে সম্মান প্রদর্শন এর ক্ষেত্রে পিতা-মাতার স্থান সবার উপরে। তাই সন্তান হিসেবে কখনোই পিতা-মাতার সাথে বেয়াদবি করা যাবে না। তাদের সাথে অশ্লীল ভাষায় কথা বলা যাবে না। তাদের সাথে অসম্মান করা যাবে না। এমনকি অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমেও তাদের সাথে খারাপ আচরণ করা যাবে না। যেসব সন্তান মাতা পিতার সাথে খারাপ ব্যবহার করে, তারা সমাজে কখনো মাথা উঁচু করে চলতে পারে না। তাদেরকে সবাই বেয়াদব বলে ডাকে। তাই সন্তান হিসেবে আমাদের সবসময়ই পিতা-মাতার সাথে আদবের সঙ্গে কথা বলা উচিত। তাদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করা উচিত।

কষ্ট না দেওয়াঃ সন্তান হিসেবে আমাদের কখনো এটা উচিত নয় বাবা মাকে কষ্ট দেওয়া। সন্তানের আচরণ, কথায় বা কাজে যদি কোন বাবা-মা কষ্ট পায় তাহলে সে সন্তান কখনো জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। শুধু মানসিকভাবে না শারীরিকভাবে ও বাবা মাকে কখনো কষ্ট দেওয়া যাবে না। এটা সন্তানের পিতা-মাতার প্রতি অন্যতম দায়িত্ব ও কর্তব্য। পিতা-মাতা কে কখনো অন্য নজরে দেখা যাবে না। তাদের সঙ্গে খুব ভালো ব্যবহার করতে হবে। পিতা মাতা যেন কোনো কারণে কষ্ট না পায়, সেদিকে নজর রাখতে হবে। তাদেরকে সবসময় হাসিখুশি রাখতে হবে, ভালো রাখতে হবে।

সন্তুষ্ট রাখাঃ সন্তান হিসেবে আরেকটি দায়িত্ব হলো বাবা-মাকে সন্তুষ্ট রাখা। যেসব সন্তান বাবা মাকে সন্তুষ্ট করতে পারে না, তারা কখনোই সন্তান হিসেবে শ্রেষ্ঠ হতে পারে না। বাবা-মাকে শুধু ভরণ পোষণ দিলেই বাবা-মা সন্তুষ্ট হয় না, তাদের সাথে বিনয়ের সঙ্গে আচরণ করে, কথাবার্তার মাধ্যমেও তাদেরকে সন্তুষ্ট করা যায়। তাই বাবা মা যেন সব সময় সন্তুষ্টি থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। সন্তান হিসেবে এটা অন্যতম প্রধান দায়িত্ব ও কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। একজন সন্তানের পিতা-মাতার দায়িত্ব ও কর্তব্যের প্রতি অবহেলা করা যাবে না। বিনয়ের সাথে পিতা মাতার প্রতি কর্তব্য পালন করে যেতে হবে।