'প্রতিবন্ধী' এই শব্দটা সম্পর্কে আমরা সবাই পরিচিত। কিন্তু প্রতিবন্ধী কি? আমরা অনেকেই জানি। সাধারণত কোন মানুষ যদি শারীরিক ও মানসিকভাবে কোন কাজে অক্ষম হয়ে পড়ে তাকে প্রতিবন্ধী বলা হয়। প্রতিবন্ধিতা সম্পর্কে সকল বিষয় আজকে আমরা এই আর্টিকালের মাধ্যমে জানতে পারবো। তাই প্রতিবন্ধীতা সম্পর্কে আরো অনেক তথ্য পাওয়ার জন্য নিজের আর্টিকেলটি মন দিয়ে পড়ুন।
প্রতিবন্ধিতার ধারণা
পৃথিবীতে প্রাথমিকভাবে দুই ধরনের প্রতিবন্ধী দেখা যায়। একটি হল শারীরিক প্রতিবন্ধী। আরেকটি হলো মানসিক প্রতিবন্ধী। যেসব মানুষের শরীরের কোন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ অক্ষম তাদেরকে বলা হয় শারীরিক প্রতিবন্ধী। আর যেসব মানুষ বুদ্ধি ভিত্তিক দিক থেকে পিছিয়ে আছে তাদেরকে বলা হয় মানসিক প্রতিবন্ধী। প্রাথমিকভাবে প্রতিবন্ধীর সম্পর্কে এটাই ধারণা পাওয়া যায়। এছাড়াও আরো অনেক প্রতিবন্ধী আছে। প্রতিবন্ধিতা সম্পর্কে আরো কিছু তথ্য জানার জন্য আর্টিকেলটি পড়তে থাকুন।
প্রতিবন্ধীতার প্রকারভেদ
প্রতিবন্ধী শুরুর সময় কাল থেকে সাধারণত দুই রকম প্রতিবন্ধী হয়ে থাকে। একটি হলো প্রাথমিক প্রতিবন্ধী অর্থাৎ জন্মগত প্রতিবন্ধী। যারা প্রতিবন্ধীত্ব নিয়েই জন্মগ্রহণ করে তাদেরকে বলা হয় প্রাথমিক প্রতিবন্ধী বা জন্মগত প্রতিবন্ধী। আরেকটি হলো অর্জিত প্রতিবন্ধী। জন্মের পর যারা বিভিন্ন কারনে নিজেদের স্বাভাবিক ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে তাদেরকে বলা হয় অর্জিত প্রতিবন্ধী। এছাড়া আরো অনেক প্রতিবন্ধী আছে। যেমনঃ
- শারীরিক প্রতিবন্ধী
- সামাজিক প্রতিবন্ধী
- মানসিক প্রতিবন্ধী
- বুদ্ধি প্রতিবন্ধী
- দৃষ্টি প্রতিবন্ধী
- শ্রবণ প্রতিবন্ধী
- বাক্ প্রতিবন্ধী
- বহুমুখী প্রতিবন্ধী
প্রতিবন্ধীতার কারণ
প্রতিবন্ধীতার বহু কারণ রয়েছে। তবে কিছু কারণ আছে যেগুলো স্বাভাবিকভাবে ঘটে থাকে। নিচে প্রতিবন্ধীতার কিছু কারণ উল্লেখ করা হলো।
সাধারণত রক্তের সম্পর্ক আছে এমন মানুষের সাথে বিয়ে করলে, সন্তান জন্ম নেওয়ার সময় প্রতিবন্ধী সন্তান জন্ম নিতে পারে।
সন্তান যখন মায়ের গর্ভে থাকে, তখন যদি মায়ের উচ্চ মাএায় জ্বর হয় তাহলে সেই সন্তান প্রতিবন্ধী হতে পারে।
আবার অনেকে আছে যাদের মস্তিষ্কের কিছু টিউমার হয় বা মস্তিষ্কের কিছু ইনফেকশন হয় তাদের সন্তানও প্রতিবন্ধী হয়ে জন্মাতে পারে।
এছাড়াও সন্তান যখন মায়ের গর্ভে থাকে তখন যদি মায়ের পুষ্টির অভাব ঘটে অর্থাৎ অপুষ্টির কারণে সন্তান প্রতিবন্ধী হতে পারে।
জন্মের পর যদি শিশু ও মা দুজনে পুষ্টির অভাবে থাকে সেই অপুষ্টি মায়ের দুধ পান করার ফলে সন্তান অপুষ্টি হয়। ফলে সন্তান প্রতিবন্ধী হয়ে যেতে পারে।
ভিটামিনের অভাবেও সন্তান প্রতিবন্ধী হয়।
এছাড়া আয়োডিনের অভাবেও সন্তান প্রতিবন্ধী হতে পারে।
সন্তান মায়ের গর্ভে থাকা অবস্থায় মা যদি প্রথম তিন মাস কোন কড়া ওষুধ গ্রহণ করে, তাহলে সন্তান প্রতিবন্ধী হতে পারে।
এছাড়া অনেক সময় এমন হয় যে সন্তান গর্ভাবস্থায় থাকাকালীন মায়ের হাম হয়। এ হাম রোগ হলে সেই মায়ের সন্তান গর্ভ থেকেই প্রতিবন্ধী হয়ে জন্মায়।
এছাড়াও গর্ভধারিনী মায়ের ডায়াবেটিস রোগ থাকলে, হৃদযন্ত্র সংক্রান্ত জটিলতা থাকলে সন্তান প্রতিবন্ধী হতে পারে।
এছাড়াও সন্তান গর্ভাবস্থায় থাকাকালীন যদি মা মদপান করে, ধূমপান করে, তামাক পাতা গ্রহণ করে তাহলে সন্তান প্রতিবন্ধী হতে পারে।
এছাড়া আরো একটি বিষয় হলো অপ্রশিক্ষিত ধাত্রী বা ডাক্তারের দ্বারা যদি প্রসব করানো হয়, তাহলে নবজাতক শিশুর মাথায় বিশেষ আঘাত পড়ে। ফলে সন্তান মানসিকভাবে প্রতিবন্ধী হতে পারে।
এছাড়াও শিশু জন্মের সময় প্রয়োজনীয় অক্সিজেনের অভাব ঘটলে শিশু প্রতিবন্ধী হতে পারে।
অনেক সময় দুর্ঘটনার কারণেও শিশু প্রতিবন্ধী হয়ে যায়।
পঙ্গুত্ব নিয়েই জন্মগ্রহণ করে যেসব শিশু তারাও হলো প্রতিবন্ধী।
এছাড়াও অনেক রোগের কারণেও শিশুরা প্রতিবন্ধী হয় যেমন পোলিও, নিউমোনিয়া, রিকেটস, টাইফয়েড ইত্যাদি।
প্রতিবন্ধীদের কিছু সমস্যা
প্রতিবন্ধী রোগীদের অনেক সমস্যা রয়েছে। তাদের মধ্যে কিছু কিছু সমস্যা নিচে আলোচনা করা হলো।
দৃষ্টি প্রতিবন্ধীরা এ পৃথিবীর কোন সৌন্দর্য দেখতে পায় না। তারা দেখতে পায় না গাছপালা, পশুপাখি। এ পৃথিবীর কোন সৌন্দর্য তারা উপভোগ করতে পারে না।
যেসব প্রতিবন্ধীরা শ্রবণ প্রতিবন্ধী তারা কোন শব্দ শুনতে পায় না। এ পৃথিবীর অনেক সুন্দর সুন্দর শব্দ আছে, যেমনঃ পাখির কিচিরমিচির আওয়াজ তারা শুনতে পায় না।
যারা যারা পঙ্গুত্ব নিয়ে জন্মগ্রহণ করে অর্থাৎ যারা শারীরিক প্রতিবন্ধী তারা জীবনের সুখ, স্মৃতি কিছুই উপভোগ করতে পারে না।
প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা সমাজ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি ক্ষেত্রে অবহেলিতার শিকার হয়।
প্রতিবন্ধীদের কর্মস্থানেও কোনো সুযোগ দেওয়া হয় না। তাদেরকে ছাটাই করে বাদ দেওয়া হয়।
প্রতিবন্ধীরা যদি কর্ম ক্ষেত্রে সুযোগ পেয়েও যায় তাহলেও তাদেরকে সমান মজুরি দেওয়া হয় না।
সমাজের অনেকেই প্রতিবন্ধীদের অপয়া মনে করে। তাদেরকে তুচ্ছ করা হয় সব সময়। তাদেরকে হীনমন্যতার শিকার হতে হয়।
এ সমাজের কিছু মানুষ প্রতিবন্ধীদের মুখদর্শন অমঙ্গল মনে করেন, অশুভ মনে করেন। তাদেরকে কোন জায়গায় স্থান দিতে চায় না।
প্রতিবন্ধী কিশোরী ও মহিলারা বাধা দিতে পারে না বলে তারা অনেক ক্ষেত্রে যৌন নির্যাতনের শিকার হয়। তারা সব সময় নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। বাংলাদেশের প্রতিবন্ধী নারীদের উপর যৌন নির্যাতনের হার অত্যন্ত ভয়াবহ।
এছাড়াও শিক্ষা, খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ইত্যাদি মৌলিক অধিকার থেকেও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা বঞ্চিত হতে থাকে।
অনেক প্রতিবন্ধী আছে যারা ঘ্রাণ নিতে পারেনা। তারা কোন খাবারের সুঘ্রাণ পায় না, কোন ফুলের সুঘ্রাণ পায় না।
প্রতিবন্ধীরা সবসময় সামাজিক ও মানসিক সমস্যায় ভুগতে থাকে। প্রতিবন্ধী শিশু ও নারীদের প্রতি আমাদের নেতিবাচক চিন্তা ভাবনা তাদেরকে আরো অসহায় করে তোলে।