কেয়ার গিভার হিসেবে ক্যারিয়ার গড়ার উপায়

কেয়ার গিভার হিসেবে ক্যারিয়ার গড়ার উপায়

বর্তমান সমাজে “কেয়ার গিভার” বা “রোগী পরিচর্যাকারী” একটি গুরুত্বপূর্ণ পেশা হিসেবে দ্রুত জনপ্রিয় হচ্ছে। মানুষের আয়ু বৃদ্ধির সাথে সাথে বয়স্ক ও অসুস্থ মানুষের সংখ্যা বেড়েছে, আর তাদের যত্ন নেওয়ার জন্য দক্ষ কেয়ার গিভারের প্রয়োজনীয়তাও দিন দিন বাড়ছে। এই পেশা শুধু মানবিকই নয়, বরং একটি স্থায়ী ও সম্মানজনক ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগও তৈরি করে।

কেয়ার গিভার কী?

কেয়ার গিভার হলো এমন একজন ব্যক্তি, যিনি অসুস্থ, বৃদ্ধ বা শারীরিকভাবে অক্ষম ব্যক্তির দৈনন্দিন কাজগুলোতে সহায়তা করেন। যেমন—খাবার খাওয়ানো, ওষুধ খাওয়ার সময় মনে করিয়ে দেওয়া, চলাফেরায় সাহায্য করা, সঙ্গ দেওয়া, চিকিৎসা সংক্রান্ত নিয়ম মেনে চলতে সহায়তা করা ইত্যাদি।।

কেন কেয়ার গিভার পেশা বেছে নেবেন?

1. মানবিক কাজ – অন্যের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা যায়।

2. চাহিদা বেশি – বাংলাদেশসহ বিদেশে এই পেশার বিশাল চাহিদা।

3. শিক্ষাগত যোগ্যতা কম লাগে – অল্প শিক্ষায়ও ভালো ক্যারিয়ার গড়া যায়।

4. বিদেশে চাকরির সুযোগ – জাপান, কানাডা, যুক্তরাজ্য, ইউরোপে কেয়ার গিভার চাহিদা দ্রুত বাড়ছে।

5. স্বনির্ভর হওয়ার সুযোগ – প্রশিক্ষণ শেষে নিজস্ব কেয়ার সার্ভিস ব্যবসা শুরু করা যায়।

কেয়ার গিভার হওয়ার জন্য যোগ্যতা

  • শিক্ষাগত যোগ্যতাঃ কমপক্ষে এসএসসি বা সমমান।
  • বয়সঃ সাধারণত ১৮ থেকে ৪৫ বছরের মধ্যে।
  • স্বাস্থ্যঃ শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে হবে।
  • গুণাবলিঃ ধৈর্য, নম্রতা, সহানুভূতি, সময় মেনে কাজ করার অভ্যাস, এবং ভালো যোগাযোগ দক্ষতা।

কেয়ার গিভার ট্রেনিং কোথায় করা যায়?

বাংলাদেশে এখন অনেক প্রতিষ্ঠান কেয়ার গিভার ট্রেনিং প্রদান করছে, যেমন—BMET অনুমোদিত ট্রেনিং সেন্টারসমূহঃ

  • BRAC Institute of Skills Development.
  • BNS Nursing Institute.
  • National Institute of Nursing & Allied Health.

এছাড়াও সরকারি ও বেসরকারি কিছু সংস্থা বিদেশগামী কেয়ার গিভারদের জন্য বিশেষ ট্রেনিং দেয়।

ট্রেনিং-এ যা শেখানো হয়

  •  রোগী পরিবহন ও তুলা-বসানোর পদ্ধতি।
  •  খাবার ও ওষুধ ব্যবস্থাপনা।
  •  রক্তচাপ, সুগার ও শরীরের তাপমাত্রা পরিমাপ।
  •  রোগীর সাথে আচরণ ও যোগাযোগ।
  •  প্রাথমিক চিকিৎসা ও জরুরি অবস্থায় করণীয়।
  •  হাইজিন ও স্যানিটেশন রক্ষণাবেক্ষণ।
  • তার সাথে সময় কাটানো, মানুষিক সাপোর্ট ও যত্ন নেওয়ার উপায়।

চাকরির সুযোগ

কেয়ার গিভার হিসেবে কাজের সুযোগ পাওয়া যায়ঃ 

  1. হোম কেয়ার সার্ভিস কোম্পানিতে।
  2.  হাসপাতাল ও ক্লিনিকে।
  3.  বৃদ্ধাশ্রমে।
  4.  বিদেশে (বিশেষ করে জাপান, কানাডা, মধ্যপ্রাচ্যে)

বিদেশে কেয়ার গিভার হিসেবে কাজ করলে মাসিক আয় ৮০,০০০ থেকে ২,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।

আরো পড়ুনঃ ঢাকায় কেয়ার গিভার চাকরির সুযোগ। বেতন ১৫,০০০৳-২২,০০০৳

ক্যারিয়ার উন্নতির সুযোগ

কেয়ার গিভার হিসেবে অভিজ্ঞতা অর্জনের পর তুমি পারবেঃ

  •  সিনিয়র কেয়ার গিভার পদে পদোন্নতি পেতে।
  •  হেলথ অ্যাসিস্ট্যান্ট বা নার্সিং অ্যাসিস্ট্যান্ট হতে।
  •  হোম কেয়ার সার্ভিস ব্যবসা শুরু করতে।
  •  বিদেশে স্থায়ী চাকরির সুযোগ পেতে।

সফল কেয়ার গিভার হওয়ার টিপস

1. সর্বদা রোগীর সাথে ধৈর্যশীল ও হাসিখুশি থাকো।

2. প্রতিদিন সময়মতো দায়িত্ব পালন করো।

3. ট্রেনিংয়ে শেখা নিয়মগুলো সঠিকভাবে অনুসরণ করো।

4. নিজের মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নাও।

5. পেশাগত আচরণ বজায় রাখো – কারণ কেয়ার গিভার মানে দায়িত্বশীলতা।

উপসংহারঃ কেয়ার গিভার পেশা শুধুমাত্র একটি চাকরি নয়, বরং এটি একটি মানবিক দায়িত্ব। সঠিক প্রশিক্ষণ ও মনোযোগ দিয়ে এই ক্ষেত্র থেকে জীবিকা অর্জনের পাশাপাশি সমাজে সম্মানও অর্জন করা যায়। বাংলাদেশে এবং বিদেশে এই পেশার ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল, তাই এখনই সময় কেয়ার গিভার হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করার।


Avatar

Shohel Rana

CEO & Founder

Enjoy the little things in life. For one day, you may look back and realize they were the big things. Many of life's failures are people who did not realize how close they were to success when they gave up.

Cookie
We care about your data and would love to use cookies to improve your experience.